এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া :: চকরিয়া উপজেলার বদরখালী ইউনিয়নের ২নম্বর বড়মাঠ এলাকায় অতর্কিত তিনটি পলবোট খুলে দেয়ায় সামুদ্রিক পানিতে ভেসে গেছে মাঠে মজুদ অন্তত ৩৫ হাজার মণ লবণ। গতকাল শুক্রবার দুপুর আড়াইটার দিকে বদরখালী ইউনিয়নের সাতডালিয়াস্থ বেড়িবাঁেধর পাশের লবণ মাঠে ঘটেছে এ অমানবিক ঘটনা। এ ঘটনার পর বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতিসাধনের মুখে স্থানীয় আড়াই শতাধিক পান্তিক লবণ চাষী দেউলিয়া হবার উপক্রম হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্থ লবণ চাষীদের মধ্যে আছেন বদরখালী ইউনিয়নের সাতডালিয়া ও নতুনঘোনা গ্রামের অন্তত ২৬০টি পরিবার। এসব পরিবারের মালিকানাধীন ২নম্বর বড়মাঠ এলাকার মোট লবণ জমির পরিমাণ ৪৮০ একর (১২শত) কানি। প্রতিবছর শুস্ক মৌসুমে এসব পরিবার উল্লেখিত জমিতে লবণ চাষ করেন। বর্ষাকালে বদরখালী সমিতি প্রকল্পটি মৎস্য চাষের জন্য ইজারা দেন। সমবায় আইনের আলোকে ইজারার টাকার একটি অংশ জমির মুল মালিকদেরকে দেয়া হয়। অবশিষ্ঠ অংশের টাকা সমিতির তহবিলে রক্ষিত থাকে এলাকার সার্বিক উন্নয়নে ব্যয় নির্বাহ করতে।
ক্ষতিগ্রস্থ লবণ চাষীরা জানান, বদরখালী সমিতি থেকে লবণ মাঠের ওই জায়গা গতবছর দুইসনা মেয়াদে মৎস্য চাষের জন্য ইজারা নিয়েছেন সমিতির বর্তমান সভাপতি হাজি নুরুল আলম সিকদার। এবছর লবণ মৌসুম শেষ হওয়ার আগে লবণ চাষীদের মাঠ ছেঁেড় দেয়ার জন্য চাপ দিয়ে আসছেন অভিযুক্ত নুরুল আলম সিকদার ও তাঁর লোকজন।
লবণ চাষীরা অভিযোগ তুলেছেন, লবণ মাঠ ছেঁেড় দিতে বারবার চাপ প্রয়োগের প্রেক্ষিতে মাঠে মজুদ থাকা লবণ ও মালামাল সমুহ অপসারণে আমরা (চাষীরা) আগামী মঙ্গলবার (২৮ মে) পর্যন্ত সময় চেয়ে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে সমিতির সভাপতি ও সম্পাদকের কাছে মোখিক আবেদন জানাই।
ভুক্তভোগী চাষীদের অভিযোগ, সমিতির কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে মাঠ থেকে মজুদ লবণ ও মালামাল সরিয়ে নিতে সময় চেয়ে আসার একদিন পর গতকাল শুক্রবার দুপুরে বেশিরভাগ চাষী মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করতে গেলে এ সুযোগে অতর্কিত ৮-১০জনের একটি দল লবণ মাঠের চারপাশের তিনটি পলবোট খুলে দেন এবং কয়েকটি স্থানে মাটির বাঁধ কেটে দিয়ে লবণ মাঠে সামুদ্রিক পানি ঢুকিয়ে দেয়। তাতে স্থানীয় আড়াই শতাধিক চাষীর অন্তত ৪৮০ একর লবণ মাঠ মুহুর্তে পানিতে তলিয়ে যায়।
বদরখালী ইউনিয়নের নতুনঘোনা ও সাতডালিয়া গ্রামের বাসিন্দা লবণ চাষী নুরুল আমিন, আমির হোসেন, রিদুয়ানুল হক, মোহাম্মদ আলী, মাহামুদুল করিম, জয়নাল আবেদিন ও ইলিয়াছ অভিযোগ করেছেন, অতর্কিত তিনটি পলবোট ছেঁেড় দিয়ে ও কয়েকটি স্থানে বেড়িবাঁধ কেটে দেয়ায় সামুদ্রিক পানিতে তলিয়ে গেছে আমাদের লবণ মাঠ। এতে আড়াই শতাধিক চাষীর মাঠে মজুদ অন্তত ৩৫ হাজার মণ লবণ পানিতে ভেসে গেছে। এ ঘটনায় আমাদের কমপক্ষে ১০ লাখ ৫০ হাজার ক্ষতিসাধন হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্থ লবণ চাষীদের অভিযোগের ব্যাপারে বক্তব্য জানতে বদরখালী সমবায় ও কৃষি উপনিবেশ সমিতির সভাপতি হাজি নুরুল আলম সিকদারের সঙ্গে কথা বলার চেষ্ঠা করা হয়। তিনি মোবাইল ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
তবে বিষয়টির আলোকে বক্তব্য দিয়েছেন সমিতির সম্পাদক জয়নাল আবেদিন খাঁন। তিনি বলেন, লবণ মৌসুম শেষ হয়ে গেছে অনেক আগে। বর্তমানে বেশিরভাগ মাঠে বর্তমানে লবণ মজুদ নেই। চাষীরাও মাঠ ছেঁেড় দিয়েছেন। বদরখালী সমিতির ২নম্বর বড়মাঠ প্রকল্পটি যেহেতু মৎস্য চাষের জন্য সমিতি কতৃপক্ষ আগে ইজারা দিয়েছেন, সেইজন্য আমরা চাষীদেরকে মাঠ ছেঁেড় দিতে অনুরোধ করেছি।
সমিতির সম্পাদক খাঁন জয়নাল আরও বলেন, কয়েকদিন আগে বৃষ্টিপাত হলে বড়মাঠের লবণ চাষীরা মজুদ লবণ ও মালামাল সরিয়ে নিয়েছেন। সেখানে তাঁরা ক্ষতিগ্রস্থ হবার কোন অবকাশ নেই। তবে তিনি মজুদ লবণ সরিয়ে নিতে চাষীরা বৃহস্পতিবার সমিতি কার্যালয়ে এসে সময় চেয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন। #
পাঠকের মতামত: